মাউন্ট এভারেস্টে হারিয়ে যাওয়া অভিযাত্রীদের গল্প: হারানোর অজানা অধ্যায়
মাউন্ট এভারেস্ট, বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। এটি শুধু একটি উচ্চতা নয়, অভিযাত্রীদের কাছে এটি একটি চরম চ্যালেঞ্জ, স্বপ্ন ও সাহসিকতার প্রতীক। তবে এভারেস্টের শৃঙ্গ স্পর্শ করার পথ কখনোই সহজ নয়। এই পথেই অগণিত অভিযাত্রী চিরতরে হারিয়ে গেছেন, যাদের অনেকেরই সন্ধান আজও মেলেনি। এভারেস্টের বরফাবৃত গিরিশৃঙ্গে হারিয়ে যাওয়া এই সাহসী মানুষদের গল্প একদিকে যেমন রহস্যময়, তেমনি বেদনাদায়ক।
মৃত্যুর অঞ্চল: এভারেস্টের প্রাণঘাতী অঞ্চল
মাউন্ট এভারেস্টে ৮,০০০ মিটার উচ্চতার ওপরে "ডেথ জোন" নামে পরিচিত একটি অঞ্চল রয়েছে। এখানে বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা অত্যন্ত কম, তাপমাত্রা অনেক নিচে নেমে যায়, এবং আবহাওয়া মুহূর্তেই খারাপ হয়ে উঠতে পারে। এই কঠিন অঞ্চলে শারীরিক ও মানসিক চাপের কারণে অভিযাত্রীদের মধ্যে অসুস্থতা, ক্লান্তি এবং বিভ্রান্তি দেখা দেয়। অনেক সময় তারা ভুল পথে চলে যান অথবা দুর্ঘটনার শিকার হন।
কিছু হারিয়ে যাওয়া অভিযাত্রীর গল্প
হারিয়ে যাওয়া অভিযাত্রীদের মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত নাম জর্জ ম্যালরি এবং অ্যান্ড্রু ইরভাইন। ১৯২৪ সালে তারা শৃঙ্গ জয়ের চেষ্টায় বের হন, কিন্তু আর ফিরে আসেননি। তাদের গল্প আজও রহস্যে মোড়া। ১৯৯৯ সালে ম্যালরির দেহ উদ্ধার করা হলেও ইরভাইনের কোনো সন্ধান মেলেনি। তাদের শৃঙ্গ স্পর্শ করার আগে মৃত্যু হয়েছিল, নাকি পরে, তা আজও অজানা।
আরেকটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটে ১৯৯৬ সালে, যখন এভারেস্টে এক ভয়াবহ ঝড়ে আটকা পড়ে আটজন অভিযাত্রী প্রাণ হারান। এই ঘটনা ইতিহাসে "১৯৯৬ এভারেস্ট ডিজাস্টার" নামে পরিচিত। লেখক জন ক্রাকাউয়ার তার বই Into Thin Air-এ এই ঘটনার বিশদ বিবরণ দেন।
বরফের নিচে চিরতরে হারিয়ে যাওয়া
এভারেস্টের অত্যন্ত ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে যেসব অভিযাত্রী এখানে মৃত্যুবরণ করেন, তাদের শরীর প্রায় অক্ষত অবস্থায় থেকে যায়। অনেকে বরফে ঢেকে চিরতরে হারিয়ে যান। কিছু দেহ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে আসে, তবে অধিকাংশই বরফের নিচে রয়ে গেছে। এভারেস্টে হারিয়ে যাওয়া এই অভিযাত্রীদের কথা ভাবলে মনে হয়, এই গিরিশৃঙ্গ যেন তাদের নিজের মধ্যে ধারণ করে রেখেছে।
কেন ফিরে আসে না সবাই?
যেসব অভিযাত্রী এভারেস্টে মারা যান বা হারিয়ে যান, তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করা খুবই কঠিন। তীব্র ঠাণ্ডা, অক্সিজেনের অভাব এবং দুর্গম পথ উদ্ধারকাজকে প্রায় অসম্ভব করে তোলে। অনেক সময় মৃতদেহ উদ্ধার করাও অত্যন্ত বিপজ্জনক। ফলে অভিযাত্রীদের পরিবার-পরিজনদের কেবল অপেক্ষা এবং প্রার্থনার মধ্যেই থাকতে হয়।
মাউন্ট এভারেস্ট: সাহসিকতার মূর্ত প্রতীক
হারিয়ে যাওয়া অভিযাত্রীদের গল্প কেবল দুঃখজনক নয়, বরং এটি মানুষের সীমাহীন সাহসিকতার পরিচয়ও বহন করে। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এক অনিশ্চিত যাত্রায় বেরিয়ে পড়েছিলেন, শুধুমাত্র তাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য।
মাউন্ট এভারেস্ট আজও অনেকের কাছে এক চূড়ান্ত লক্ষ্য। যারা এই পথের যাত্রী হন, তারা জানেন যে এই পথ শুধু বিজয়ের নয়, বরং ত্যাগেরও। আর যারা হারিয়ে গেছেন, তারা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে প্রকৃতি কতটা রহস্যময় এবং ভয়ঙ্কর হতে পারে।
Imran Hasan
2 months ago